দিদার হোসাইন,স্টাফ রিপোর্টারঃ
বঙ্গোপসাগরের আগ্রাসন রোধ করণ ও প্রকৃতিক সৌন্দর্য্যে ভরা চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপকূলের সমুদ্র সৈকত তীরবর্তী বনায়নের ঝাউবাগান ও ম্যান গ্রুপ বাগান।ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং এর তাণ্ডবে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে।এতে অন্তত ৫০ লক্ষাধিক টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে উপকূলীয়(চুনতি)বন রেঞ্জ সুত্রে জানা গেছে।
২৬ অক্টোবর(বুধবার)বিকেলে সরেজমিনে পরিদর্শন কালে উপজেলার সর্বপশ্চিমে বঙ্গোপসাগর তীরবর্তী উপকূলে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং তান্ডবে ঝাউ বাগান ও ম্যান গ্রুপ বাগান লণ্ডভণ্ড হয়ে যাওয়া দৃশ্য দেখা গেছে।
এসময় উপকূলীয় (চুনতি)বন রেইঞ্জার শফিকুল আমিন পাটওয়ারী জানান,বঙ্গোপসাগারের আগ্রাসন রোধ কল্পে ও প্রকৃতিক সৌন্দর্যের জন্যে বাঁশখালীর সমুদ্র উপকূলে সরকারি এই বনায়ন।এই বনায়ন একদিক দিয়ে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য ফুটে ওঠে অপরদিকে সমুদ্রে সৃষ্ট বিভিন্ন জলোচ্ছ্বাসের আগ্রাসন রোধ করতে উপকূলীয় অঞ্চলের বড় ধরনের সহায়ক হয়।
গত ২০১৯-২০ অর্থ বছরের ৪০ হেক্টর ম্যানগ্রুপ বাগানের অ , বনায়নে প্রায় অর্ধেক গাছ ধ্বংস হয়ে গেছে এবং গত ২০২০-২১ অর্থ বছরের ১০ হেক্টর ঝাউ বাগান এটা পুরোটাই তচনচ হয়ে,এছাড়াও ২০২০-২১ অর্থ বছরে গণ্ডামারা বিটে ৫০ হেক্টর, রত্নপুর বিটে ৫০ হেক্টর,প্রেমাশিয়া বিটে ১০ হেক্টর ঝাউ বাগান সেটাতে হয়তো ৩০-৪০% চারা আছে বাকী প্রায় ৫০-৬০% চারার মধ্যে বেশির ভাগই ভেঙ্গে গেছে,আর কিছু চারা উপড়ে পড়ে গেছে,শিকড় ছিড়ে গেলে চারা গুলো বাঁচানো সম্ভব হয়না এগুলো মরে যায়।তাছাড়াও ২০২০-২১ অর্থ বছরের ৮০ হেক্টরের আরো একটি বাগান করা হয়েছিল সেটিও ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে এবং বাহারচড়া বনায়নের “ঝাউ চারা”গুলোর অধিকাংশ চারা ভেঙ্গে গেছে আর অবশিষ্ট চারা গুলোও কিন্তু জলোচ্ছ্বাসের আগ্রাসনে উপড়ে ফেলেছে।
সর্বশেষ কিছু “ঝাউচারা”চরের উপরি অংশে লাগানো হয়েছিল, সেগুলোও পড়ে গিয়েছিল, এখন সেগুলো আবার খুটি দিয়ে সোজা করে দিয়েছি,শুধুমাত্র সেই “চারা” গুলো মোটামুটি ভাবে ঠিক আছে।সার্বিক দিকদিয়ে বিবেচনা করলে বাঁশখালী উপকূলের সমুদ্র সৈকত তীরবর্তী “বনায়ন” ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং এর তান্ডবে বাগানের চারা গুলো ধ্বংস হয়ে যাওয়াতে অন্তত ৫০ লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে বলে জানান বন কর্মকর্তা শফিকুল আমিন।
পরিদর্শন কালে প্রেমাশিয়া বিট অংশে “ম্যান গ্রুপ” বাগান থেকে বেশ কিছু বড় বড় গাছ কেটে নেয়ার দৃশ্যও চোখে পড়ে।কিন্তু গাছ গুলো কে বা কারা কেটে নিচ্ছে তা জানতে চাইলে রেইঞ্জার শফিকুল আমিন বলেন,আসলে গাছ যে কেটে নিচ্ছে তা না।তবে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করার সময় বাগানে উপড়ে পড়ে থাকা কিছু গাছ কাটা হয়েছিল,সেখান থেকে কিছু গাছ আমরা সংগ্রহ করেছি আর কিছু হয়তো এদিক সেদিক হইতেই পারে,যেহেতু আমাদের জনবল কম। আর আমরা যে গাছ গুলো সংগ্রহ করেছি সে গুলো টেন্ডার দেয়া হবে বলে জানা শফিকুল।
এছাড়াও বাঁশখালী উপকূলীয় বন বিটে জনবল কম থাকাতে এই বিশাল বনায়ন দেখা-শোনা করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে,প্রেমাশিয়া বিটে একজন কর্মকর্তা ও একজন নৌকা চালকসহ শুধু ২ জন লোকই বাগান দেখা- শোনা করে থাকে।ইতিমধ্যে লোক নিয়োগ দেওয়ার বিষয়টি উর্ধতন কতৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।আর লোকজন থাকার জন্যে যে ঘরের প্রয়োজন তাও স্টিমিট পাটানো হয়েছে।সেই টেন্ডার “চেনশ্যান”হয়ে গেলে লোকজন থাকার ঘরটা করতে পারলে লোক নিয়োগ দিতে আর কোনো অসুবিধা হবেনা বলে মনে করেন তিনি।
এসময় তিনি আরো বলেন,এবারের ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং এর আক্রমণে বাতাসের গতিবেগ তেমন না থাকলেও সমুদ্রে জলোচ্ছ্বাসের যে আক্রমণ সেটা চোখে না দেখলে হয়তো কেউ বুঝতেও পারবেনা।এই আগ্রাসন ছিলো স্বাভাবিক ঢেউয়ের চেয়ে আরো ৮-১০ ফুটেরও বেশ প্রবল।সমুদ্র উপকূলে এই বনায়ন না থাকলে হয়তো বেড়িবাঁধ উপচে পড়ে বাঁশখালীর পুরো উপকূল অঞ্চল প্লাবিত হয়ে মানুষের ঘরবাড়ি,দোকান পার্ট,মুরগীর ফার্ম,গবাদি পশু,ধানিজমি,সবজি ক্ষেত খামার ও রাস্তা-ঘাট ধ্বংস হয়ে যেতো।বনায়ন গুলো থাকার কারণে সেই আগ্রাসন মোটামুটি ভাবে রোধ হয়েছে।
Leave a Reply