দিদার হোসাইন,স্টাফ রিপোর্টারঃ
চট্টগ্রামের বাঁশখালীর সাম্প্রতিক অস্বস্তিকর জনপদে এখন স্বস্তি ফিরে আনলেন বাঁশখালী থানা অফিসার ইনচার্জ ওসি মুহাম্মদ কামাল উদ্দিন।বাঁশখালীতে ওসি হিসেবে যোগদানের পর থেকে অপরাধ দমনসহ উত্তেজনাকর ও অনিরাপদ জনপদকে নিরাপদ জনপদে রূপান্তরিত করার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করায় টানা তৃতীয় বারের মতো চট্টগ্রাম জেলার শ্রেষ্ঠ ওসি'র সম্মাননা পেলেন বাঁশখালী থানা অফিসার ইনচার্জ ওসি কামাল উদ্দিন।
সাম্প্রতিক সময়ে চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় হত্যা,রাহাজানি,তুচ্ছ বিষয়কে পূজিকরে মারামারি-হানাহানি,চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস,চুরি- ডাকাতি, ভূমি ও জলদস্যুতার নিত্যচিত্রে অস্বস্তিকর ও অনিরাপদ জনপদ হিসেবে দেশজুড়ে আতংকের নাম ছিলো বাঁশখালী।বাঁশখালীর নাম শুনলেই আতংকিত হয়ে যেতো বিভিন্ন জেলা-উপজেলার শান্তি প্রিয় মানুষ গুলো।বিশেষ করে সাধনপুরের ১১ জনকে পুড়িয়ে মারা, বঙ্গোপসাগরে ৩১ জেলেকে সাগরে হত্যা ও গণ্ডামারা কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রে চার খুন,পরে শ্রমিক হত্যা,শীলকূপ ইউপিতে চাঞ্চল্যকর জোড়ার খুনের ৫ আসামীকে ৭২ ঘন্টার মধ্যে আটকসহ আরো কত অপরাধীদের আটকের দৃষ্টান্ত স্থাপন।সেই উত্তেজিত জনপদ এখন অনেকটাই নিরাপদ ও শান্ত।আর অরাজকতার বাঁশখালীকে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ফিরিয়ে আনার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার দৃষ্টান্ত স্থাপনের মূল নেপথ্যে ওসি কামাল উদ্দিন।
থানা সূত্রে জানা গেছে, বাঁশখালী থানা অফিসার ইনচার্জ ওসি কামাল উদ্দিনের নেতৃত্বে গত এক বছরে পুলিশ ১০টি আগ্নেয়াস্ত্র, ৫৪ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়েছে।শীলকূপে জোড়া খুনের আসামীদের দ্রুত আটক ও পূজা মণ্ডপের ঘটনার সাথে জড়িতদের আটক করা ও মুসলমানদের ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল ফিতর,ঈদুল আযহা,ঈদে মিলাদুন্নবী (সাঃ) উপলক্ষে মিলাদ মাহফিল ও হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় দূর্গাপূজা উৎসব উদযাপনে সকল প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে অন্তত দক্ষতা, অভিজ্ঞতা ও বিচক্ষণতার সাথে ভূমিকা পালন করেন ওসি কামাল।এছাড়াও সাজাপ্রাপ্ত, জি.আর, সি.আর মামলা মিলে ১ হাজার ২৩৯ ওয়ারেন্টভুক্ত দীর্ঘ পলাতক আসামির ওয়ারেন্ট তালিকা তামিল করা হয়েছে।
বাঁশখালীতে যোগদানের পর থেকে মাদক বিরোধী বিশেষ অভিযানকে অব্যাহত রাখায় মাদকের মামলা হয়েছে ১২৮টি এবং মাদক মামলায় ২১৮ জন আসামীকে আটক ও ৩ লাখ ১০ হাজার ১২টি ইয়াবা, ১ হাজার ৩৮৯ লিটার চোলাই মদ এবং ৯ কেজি ৩৫০ গ্রাম গাজা ও উদ্ধার করা হয়েছে ওসি'র নেতৃত্ব।এই বিষয়ে থানায় ১২৮টি মাদক মাদক মামলা হয়েছে।
উল্লেখ্য,কক্সবাজার জেলার রামু উপজেলার কৃতি সন্তান মুহাম্মদ কামাল উদ্দিন গত ২০০৭ সালে বিবিএ,এমবিএ একাউন্টিং পাশ করে সাব-ইন্সপেক্টর হিসেবে পুলিশে যোগদান করে ২০১৬ সালে প্রমোশন লাভে তিনি ইন্সপেক্টর হন।পরে গত ২০২১ সালের ১৩ অক্টোবর বাঁশখালী থানা অফিসার ইনচার্জ হিসেবে যোগদান করেন কক্সবাজার জেলার রামু উপজেলার কৃতি সন্তান ওসি মুহাম্মদ কামাল উদ্দিন।
বাঁশখালী থানায় ওসি হিসেবে যোগদানের পর থেকে পুরো বাঁশখালীতে সন্ত্রাস,চাঁদাবাজ, দূর্নীতিবাজ,ভূমি ও জলদস্যু,প্রতারক চক্র,দাঙ্গা-হাঙ্গামাকারী,নানামূখি অপরাধ ও অপকর্ম কারীসহ মাদকের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেয়ার ফলে পুরো বাঁশখালী জুড়ে এখন অপরাধীদের জন্যে এক আতংকের নাম ওসি কামাল।
তিনি যোগদানের পর থেকে বাঁশখালীতে অপরাধের হার অনেকটাই কমে গেছে।
এছাড়াও বাঁশখালীর কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র এলাকায় উত্তেজনাকর পরিস্থিতিকে নিরসন করে পুরো বাঁশখালীকে শান্ত ও নিরাপদ পরিবেশে রূপান্তরিত করা সহ অপরাধ মূলক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে দৃষ্টান্ত স্থাপন করায় গত ২০২১ সালের নভেম্বরে চট্টগ্রাম জেলার শ্রেষ্ঠ ওসি'র সম্মাননা পান,একই বছর ডিসেম্বর মাসে দ্বিতীয় বারের মতো একই ভাবে চট্টগ্রাম জেলার শ্রেষ্ঠ ওসি হিসেবে শ্রেষ্ঠত্বের সম্মননা লাভ করেন তিনি।এবার টানা তৃতীয় বারের আবারো চট্টগ্রাম জেলার শ্রেষ্ঠ ওসি'র সম্মাননা পেলেন বাঁশখালী থানা অফিসার ইনচার্জ ওসি মুহাম্মদ কামাল উদ্দিন।
ওসি কামাল উদ্দিন বলেন,বাঁশখালীতে কর্মরত সংবাদকর্মীরা যে ভাবে তুলে ধরেছেন তাতে আমি সাংবাদিক ভাইদের প্রতি কৃতজ্ঞ।তবে আমি কাউকে খুশি কিংবা নিজেকে হাইলাইট করার জন্যে কিছুই করিনি।অনিরাপদ ও অস্বস্তিকর জনপদকে বাঁশখালীর মানুষের জন্যে শান্তি ও নিরাপদ করার লক্ষ্যে কাজ করেছি।এতে মাদক,খুন,মারামারি, হানাহানি,হত্যা রাহাজানি, ভূমি ও জলদস্যুতা, সাজাপ্রাপ্ত ও ওয়ারেন্ট সহ কালো তালিকাভূক্ত পলাতক আসামীদের আটক,আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার,মাদক উদ্ধার সহ বিভিন্ন অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে থেকে বাঁশখালীকে অপরাধমুক্ত করতে এই পর্যন্ত যা করেছি তা শুধু মাত্র আমার উপর আরোপিত দ্বায়িত্বটাই পালন করেছি।কারো প্রতি ব্যক্তি কিংবা কোন রকম আক্রোশের বশিভূত হয়ে নয়।তাছাড়া অনেক মানুষ থানায় আসতো ব্যক্তি আক্রোশ নিয়ে,আর তাদের আক্রোশকে আমি আমার দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার আলোকে মানুষের মন থেকে দূর করে দেয়ার চেষ্টা করেছি।কারণ শুধু কঠোরতা দিয়ে কাজ হয়না।তাই আমি এইসব বিষয়ে বিভিন্ন এলাকাতে গ্রাম-পুলিশ সহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সচেতন মহলের লোকজন নিয়ে সমন্বয় সভা ও কাউন্সিলিং এর মাধ্যমে মেধা,দক্ষতা ও অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে পুলিশ ও জনতার মধ্যে সৃষ্ট দূরত্বকে নিরসন করে আমার দ্বায়িত্ববোধ থেকে বাঁশখালী থানাকে জনবান্ধব ও জনতার ভরসাস্থল হিসেবে আস্থা ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি।
আবার অনেকে তাদের ন্যায্য দাবী নিয়ে থানায় আসলেও পুলিশের সাথে কথা বলার সাহস পায়না।কেউ মনে করে পুলিশ তাদের শত্রু, আবার অনেকের মনে ভয় বিরাজ করার কারণে নিজের অধিকারের কথা বলতে থানায় আসতে ভয় পেতো।যার ফলে বিভিন্ন দালালদের মাধ্যম ছাড়া তারা থানায় আসতে ভয় পায়,আবার দালালরাও সাধারণ মানুষের সেই ভয়ের কারণকে দূর্বল হিসেবে সুযোগ নিয়ে পুলিশে ও সাধারণ মানুষের মধ্যে দূরত্বতটা আরো বেশি বাড়িয়ে দিতো।কিন্তু বাঁশখালীতে আমি ওসি হিসেবে যোগদানের পর থেকে সেই সব বিষয়কে মাথায় রেখে পুলিশ ও সাধারণ মানুষের মধ্যকার সেই দূরত্বকে দূর করার মানসে থানায় দালাল প্রবেশকে নিষিদ্ধ করেছি এবং সাধারণ মানুষ যাতে নির্ভয়ে থানায় এসে যার যার অভিযোগ পেশ করতে সেই সুযোগটাও করে দিয়েছি।
উল্লেখ্য,বাঁশখালী থানার চতুর্পাশ্বে একসময় ময়লা- আবর্জনার স্তূপ ছিলো,এখন চারদিক দেয়ালে বেষ্টনী এলাকাটি এখন বিভিন্ন ফুলের বাগান দ্বারা সুসজ্জিত।দেখতেও খবই চমৎকার ও মনোমুগ্ধকর।