আনোয়ারা- বাঁশখালী-পেকুয়া সংযোগ পিএবি সড়কে সাংবাদিক পরিচয়ে লাইসেন্স বিহীন সিএনজিতে টোকেন দিয়ে চালকদের কাছ থেকে লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে আনোয়ারার সাদা মানিক, দায়িত্ব পালনকালে লাইসেন্স বিহীন ওইসব সিএনজিতে মামলা দিলে পুলিশকেও হুমকির অভিযোগ রয়েছে কথিত এই সাদা মানিকের বিরুদ্ধে।
দৈনিক সবুজ বাংলা প্রতিবেদকঃ
চট্টগ্রামের আনোয়ারা -বাঁশখালী -পেকুয়া সংযোগ (পিএবি) সড়কে সাংবাদিক পরিচয়ে আব্দুল মালেক মানিক (ওরফে সাদা মানিক) নামের কথিত সাংবাদিকের কার্ডে চলছে লাইসেন্স বিহীন শত শত সিএনজি,কার্ড দিয়ে সিএনজি চালকদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা, তার কার্ড থাকা লাইসেন্স বিহীন সিএনজি গুলোকে ট্রাফিক পুলিশরা আটক করলে এবং ওইসব সিএনজিতে মামলা দিলে ট্রাফিক সার্জেন্টদেরকে রীতিমতো হুমকি প্রদর্শন করছে বলেও অভিযোগ উঠেছে এই সাদা মানিকের বিরুদ্ধে। কিন্তু কে সে সাদা মানিক? কি তার পরিচয়? তার খুঁটিরজোর কোথায়? টানা কয়েকদিনের অনুসন্ধানে বেরি এলো তার আসল পরিচয়।
জানা গেছে, আনোয়ারা উপজেলার পরৈকোটা ইউনিয়নে তার বাড়ী, তার নাম আব্দুল মালেক মানিক ওরফে সাদা মানিক, সে বাংলাদেশ সাংবাদিক লেখক ঐক্য ফোরাম চট্টগ্রাম এর বিভাগীয় সভাপতি পরিচয় দিয়ে এবং দৈনিক আলোর বাংলাদেশ নামে এক পত্রিকার চট্টগ্রাম ব্যুরো চীপ পরিচয় দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রামের আনোয়ারা -বাঁশখালী -পেকুয়া সংযোগ (পিএবি) সড়কে তার ভিজিটিং কার্ড দিয়ে চলছে কয়েক শতাধিক লাইসেন্স বিহীন সিএনজি। তার কার্ড থাকা লাইসেন্স বিহীন ওইসব সিএনজি পুলিশ আটক করলে বা মামলা দিলে ট্রাফিক সার্জেন্টদেরকেও রীতিমতো হুমকি প্রদর্শন করে আসছিল এই সাদা মানিক এবং তার আরেক সহযোগী নাঈমুল হাকিম ওরফে সাদা হাকিম। প্রতিটি সিএনজি চালকদের কাছ থেকে প্রতিমাসে ১ হাজার থেকে ১৫০০ টাকা করে চাঁদা আদায় করে থাকে সাদা মানিক ও তার সিন্ডিকেট চক্র।
চট্টগ্রামের কর্ণফুলী, আনোয়ারা- বাঁশখালী ও পেকুয়াজুড়ে তার নেতৃত্বে গড়ে উঠেছে এই সাদা মানিকের নেতৃত্বাধীন একটি সংঘবদ্ধ সক্রিয় সিন্ডিকেট। আর তার এই সিন্ডিকেট চক্র সদস্যদের কাউকে বাংলাদেশ সাংবাদিক লেখক ঐক্য ফোরামের চট্টগ্রাম বিভাগীয় সম্পাদক, আবার কাউকে দেয়া হয়েছে দৈনিক আলোর বাংলাদেশ নামে পত্রিকার কার্ড। লাইসেন্স না থাকা সিএনজি গুলোকে ট্রাফিক পুলিশের মামলা থেকে বাঁচানোর মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে অভিযুক্ত সাদা মানিক ও তার সিন্ডিকেট চক্র সদস্যরা সিএনজি চালকদের কাছ থেকে প্রতিমাসে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযুক্ত সাদা মানিক এবং তার আরেক সহযোগী নাঈমুল হাকিম ওরফে সাদা হাকিমের নেতৃত্বে আনোয়ারা- বাঁশখালী -পেকুয়াসহ বিভিন্ন এলাকায় গড়ে উঠেছে সক্রিয় সিন্ডিকেট। বাঁশখালী প্রেমবাজার এলাকার তৌহিদুল ইসলাম চৌধুরী এবং পেকুয়া এলাকার রিদওয়ানসহ অন্তত ৩০-৪০ জন লোক তাদের এই সিন্ডিকেটের সদস্য রয়েছে বলে সিএনজি চালক সুত্রে জানা গেছে।
এছাড়াও প্রেমবাজারসহ পুরো বাঁশখালীতে প্রায় ৪০-৫০টির অধিক লাইসেন্স বিহীন সিএনজিতে রয়েছে অভিযুক্ত আব্দুল মালেক মানিক ওরফে সাদা মানিকের ভিজিটিং কার্ড।কার্ড গুলোর পেছনের অংশে থাকে সাদা মানিকের স্বাক্ষর। আর বাঁশখালীর সিএনজি গুলোতে তৌহিদুল ইসলাম চৌধুরীর মাধ্যমে এইসব কার্ড দেয়া হয়েছে, আর কার্ড প্রতিমাসে প্রতিটি সিএনজি থেকে ৮শ থেকে ১হাজার টাকা চাঁদা দিতে হয় বলে জানিয়েছে সিএনজি চালকরা।
একই ভাবে পেকুয়ার রিদওয়ান নামে এক ব্যক্তিও এই সিন্ডিকেট চক্র সদস্য হিসেবে কাজ করার প্রমাণ পাওয়া গেছে। পেকুয়া থেকে আসা বেশিরভাগ লাইসেন্স বিহীন সিএনজিতেই দেখা সাদা মানিকের দেয়া কার্ড। ওইসব কার্ডের পেছনের অংশে রয়েছে সেই রিদওয়ানের স্বাক্ষর।কার্ডধারীদের মধ্যে পেকুয়া লাইনের বেশ কয়েকজন সিএনজি চালকরা জানান, আনোয়ারা উপজেলার সাদা মানিক নামের এক সাংবাদিক এবং পেকুয়ার রিদওয়ান আমাদেরকে এই কার্ড গুলো দিয়েছে। প্রতিটি সিএনজি থেকে তাদেরকে প্রতিমাসে ১ হাজার থেকে ১৫০০ টাকা করে দিতে হয়। পেকুয়া এলাকার প্রায় শতাধিক লাইসেন্স বিহীন সিএনজি চালককে একই ভাবে কার্ড দেয়া হয়েছে বলেও জানিয়েছে চালকরা। এসময় তারা আরো বলেন পুলিশ আমাদের গাড়ি ধরলে সাদা মানিক পুলিশকে ফোন করে আমাদের সিএনজি গুলো ছাড়িয়ে নেয়ার নিবে বলে কথা দিয়েছে। পরিস্থিতির শিকার হয়ে আমরা এই টোকেন গুলো নিয়েছি, কিন্তু এখন তারা আমাদের ফোন রিসিভ করতেছে না।
ট্রাফিক পুলিশ সুত্রে জানা গেছে, আনোয়ারা- বাঁশখালী -পেকুয়ার অন্তত এক-দেড় শতাধিক লাইসেন্স বিহীন সিএনজিতে রয়েছে কথিত সাংবাদিক আব্দুল মালেক মানিক ওরফে সাদা মানিকের ভিজিটিং কার্ড। লাইসেন্স বিহীন ওইসব সিএনজি ধরলে ট্রাফিকের মোবাইলে আসে একেরপর এক হুমকি, তার কার্ড থাকা লাইসেন্স বিহীন সিএনজি গুলোতে মামলা দিলে ট্রাফিক সার্জেন্টদের চাকরি ছাড়া করার হুমকি প্রদর্শন করে অভিযুক্ত সাদা মানিক। একই ভাবে নাঈমুল হাকিম ওরফে সাদা হাকিম নামের এক ব্যক্তির মোবাইল থেকেও এমন হুমকি আসে বলেও পুলিশ সুত্রে জানা গেছে।
এদিকে আব্দুল মালেক মানিক ওরফে সাদা মানিকের সাথে যোগাযোগ করে বিষয়টি জানতে চাইলে সাদা মানিক নিজেকে বাংলাদেশ সাংবাদিক লেখক ঐক্য ফোরাম চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি ও দৈনিক আলোর বাংলাদেশ পত্রিকা চট্টগ্রাম ব্যুরো চীপ পরিচয় দিয়ে প্রতিবেদককে উল্টো প্রশ্ন করে বলেন, সিএনজি থেকে আমি এক লাখ টাকা করে নিলেও তোমাকে জবাব দিহি করতে হবে কেন? একপর্যায়ে রাগান্বিত হয়ে প্রতিবেদককে হুমকি দিয়ে মানিক আরও বলেন, তুমি কার সাথে কথা বলতেছো তা কি তুমি জানো? তুমি একজন উপজেলা প্রতিনিধি হয়ে একজন ব্যুরো চীপের সাথে কথা বলতে তোমার সাহস হয় কিভাবে? আমার কার্ড থাকা সিএনজি গুলোকে মামলা দিলে সার্জেন্টদের চাকরি ছেড়ে এখান থেকে যে পালিয়ে যেতে হবে সেটা কি তুমি জানো? এইসব কথা বলে প্রতিবেদককে দেখে নেবে বলে হুমকি প্রদর্শন করে মোবাইল সংযোগ কেটে দেন অভিযুক্ত সাদা মানিক।
উল্লেখ্য, বিভিন্ন সিএনজি থেকে এভাবে চাঁদা আদায় করতে গিয়ে এই সিন্ডিকেট চক্র পটিয়া থানাধীন শান্তিহাট এলাকায় গত ২০২৩ সালের ১৩ ডিসেম্বরে স্থানীয় জনতার হাতে গণধোলাইয়ের শিকার হয়েছিল সাদা চামড়ার এক লোক। গণধোলাইয়ের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছিল। ওই ভিডিওতে দেখা যায় অন্তত কয়েক শতাধিক জনতা সাদা চামড়ার এক লোককে ঘিরে রাখার দৃশ্য। ছড়িয়ে পড়া ওই ভিডিওতে দেখা যাওয়া লোকটি অভিযুক্ত সাদা মানিকের অপর সহযোগী নাঈমুল হাকিম ওরফে সাদা হাকীম বলে জানা গেছে। ভাইরাল হওয়া ভিডিওটি প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। সাদা মানিকের দেয়া বেশ কিছু কার্ড বাঁশখালী -পেকুয়া লাইনে পরিচালিত লাইসেন্স বিহীন বেশ কিছু সিএনজি চালকদের হেফাজত থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। একই ভাবে প্রতিবেদককে হুমকি প্রদর্শনের বিষয়টি রেকর্ড করা হয়েছে।
ট্রাফিক পুলিশ দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তার হুমকি -ধমকিকে উপেক্ষা করে যখন লাইসেন্স বিহীন ওইসব সিএনজিতে মামলা দিয়ে থাকেন ঠিক তখনি তার সংঘবদ্ধ সক্রিয় সিন্ডিকেট চক্রের সদস্যদের নিয়ে ট্রাফিক পুলিশরা সিএনজি চালকদেরকে হয়রানি করতেছে বলে অভিযোগ তুলে সড়কে দাঁড়িয়ে উদ্দেশ্য প্রনোদিত ভাবে বক্তব্য দেয়ার একটি ভিডিও দেখা যায়। ভিডিওতে মানিককে ট্রাফিক সার্জেন্টরা সিএনজি চালকদেরকে হয়রানি করছে বলে কথা বলতে শুনা যায়। এভাবে পুলিশকেও হুমকি প্রদর্শনের ভিডিওটি সংরক্ষণ করা হয়েছে। সাদা মানিকের নেতৃত্বাধীন সিন্ডিকেট চক্রটি অবৈধ উপার্জন করার লক্ষ্যে পুলিশ, সাংবাদিক ও বিভিন্ন সিএনজি স্টেশনের লোকজনকে এভাবে ভীতি প্রদর্শন করে দীর্ঘদিন ধরে দেদারসে চালিয়ে যাচ্ছে তাদের এই টোকন বাণিজ্য। আওয়ামী সরকারের আমলে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে টোকেন বাণিজ্য করে শত শত সিএনজি থেকে প্রতিমাসে হাতিয়ে নিতো এই সাদা মানিক এবং তার সিন্ডিকেট চক্র। আওয়ামী সরকার পতনের পরেও দাপিয়ে বেড়াচ্ছে অভিযুক্ত সাদা মানিক। তার খুঁটিরজোর কোথায়? তা খতিয়ে দেখতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে ভুক্তভোগী সিএনজি চালকরা।
ট্রাফিক পুলিশকে দায়িত্ব পালনে বাঁধা দেয়া এবং সার্জেন্টদেরকে হুমকি প্রদর্শন করে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে কার্ড বাণিজ্য করে অভিযুক্ত সাদা মানিক এবং তার নেতৃত্বাধীন সিন্ডিকেট চক্র সদস্যরা শত শত সিএনজি চালকদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ দীর্ঘদিন যাবৎ শুনা গেলেও এখনো পর্যন্ত এই সিন্ডিকেট চক্রের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাই গ্রহণ করছেনা প্রশাসন।
স্থানীয় শত শত সিএনজি চালক অভিযোগ করে বলেন, কথিত সাংবাদিক সাদা মানিক এবং সাূদা হাকীমের নেতৃত্বাধীন সিন্ডিকেট চক্র সদস্য বাঁশখালী প্রেমবাজার এলাকার তৌহিদুল ইসলাম চৌধুরী, সিএনজি চালক আব্দুস শুক্কুর এবং পেকুয়ার রিদওয়ানসহ এই সিন্ডিকেট চক্র সদস্যরা সিএনজি চালকদের কাছ থেকে গাড়ী প্রতি মাসে ১হাজার থেকে ১৫০০ টাকা করে দিয়ে কার্ড নিতে চাপ সৃষ্টি করে আসছিল। তাদের কাছ থেকে কার্ড না নিলে এই সড়কে সিএনজি চালাতে দিবেনা বলে সিএনজি চালকদেরকে রীতিমতো হুমকি দিয়ে আসছিল এই সিন্ডিকেট চক্র। হুমকির কারণে তাদের কাছ থেকে ওইসব কার্ড নিতে বাধ্য হয়েছে বলে জানিয়েছে সিএনজি চালকরা।
পুলিশের মামলা থেকে ছাড়িয়ে নেয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও অনেক সময় সিএনজি চালকদের ফোনও রিসিভ করেনা সিন্ডিকেট চক্র। তাদের চাঁদাবাজিতে সিএনজি চালকরাও একধরনের অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে শুধু তা নয় রীতিমতো তাদের হুমকি কারণে আতংকেও রয়েছে ওইসব সিএনজি চালকরা। সাদা মানিকের নেতৃত্বাধীন সিন্ডিকেট চক্রের জিম্মিদশা থেকে মুক্তি পেতে অভিযুক্ত সাদা মানিকসহ সিন্ডিকেট চক্রের সকল সদস্যদেরকে দ্রুত আইনের আওতায় আনতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপও কামনা করেছে অসহায় সিএনজি চালকরা।
এবিষয়ে বাঁশখালী -আনোয়ারা-পেকুয়া সংযোগ সড়কে দায়িত্বে থাকা ট্রাফিক সার্জেন্ট /টিআইরা অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, পেকুয়া -বাঁশখালী ও আনোয়ারা -কর্ণফুলীসহ এই সড়কে অন্তত কয়েক শতাধিক লাইসেন্স বিহীন সিএনজি চালকদের কাছে রয়েছে সাদা মানিকের দেওয়া ভিজিটিং কার্ড, কার্ডের পেছনের অংশে রয়েছে সাদা মানিকের স্বাক্ষর এবং পেকুয়া লাইনের সিএনজি গুলোতে থাকা বেশ কিছু কার্ডে রিদওয়ান নামে সাদা মানিকের আরেক সহযোগীর স্বাক্ষর দেখা গেছে। লাইসেন্স বিহীন ওইসব সিএনজি ধরলে ট্রাফিক সার্জেন্ট/ টিআইকে ফোন করে চাকরি ছাড়ার হুমকি প্রদর্শনও করে অভিযুক্ত সাদা মানিক এবং তার আরেক সহযোগী নাঈমুল হাকিম ওরফে সাদা হাকিম। তারা রীতিমতো হুমকি প্রদর্শন করে ট্রাফিক পুলিশের কাজে বাঁধা সৃষ্টি করছে এবং তাদের কথা মতো গাড়ী ছেড়ে না দিলে পুলিশকে চাকরি ছাড়া করার হুমকি প্রদর্শন করে থাকে এই সিন্ডিকেট চক্র। দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে লাইসেন্স বিহীন সিএনজিতে মামলা দেয়ার কারণে ট্রাফিক সার্জেন্ট / টিআইরাও প্রতিনিয়ত এই সংঘবদ্ধ চক্রের হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে বলেও ট্রাফিক পুলিশ সুত্রে জানা গেছে।