মুহাম্মদ দিদার হোসাইনঃ
বাঁশখালীতে জাঁকজমক আয়োজনে দুর্গোৎসব ও প্রতিমা বিসর্জনের মধ্যদিয়ে প্রশাসনের কঠোর নিরাপত্তায় শান্তিপূর্ণ ভাবে সম্পন্ন হলো সনাতনী ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় বড় উৎসব দুর্গাপূজা অনুষ্ঠান, এতে সার্বিক সহযোগিতায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার দৃষ্টান্ত স্থাপন করলো রাজনৈতিক দল ও মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকজন।
১৩ অক্টোবর (রোববার) উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় শারদীয় দুর্গোৎসব উপলক্ষে সবধরনের আনুষ্ঠানিকতা শেষে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্যদিয়ে দুর্গাপূজা উৎসব সম্পন্ন করেছে বাঁশখালীতে বসবাসরত সনাতনী ধর্মাবলম্বীরা। ৫ আগস্ট আওয়ামী সরকার পতন পরবর্তী সময় থেকে বিভিন্ন কুচক্রী মহল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করলেও সব ধরনের বিভ্রান্তি ও আতংকের অবসান ঘটিয়ে কোনো ধরনের বাঁধা বিপত্তি ছাড়াই নির্বিঘ্নে শান্তিপূর্ণ ভাবে জাঁকজমক আয়োজনের মধ্যদিয়ে সম্পন্ন হয়েছে এই দুর্গোৎসব।
এবারের দুর্গোৎসব অনুষ্ঠানকে নির্বিঘ্নে ও সুন্দর ভাবে সম্পন্ন করতে দায়িত্ববোধ থেকে নিরলস ভাবে কাজ করেছে উপজেলা প্রশাসন, থানা পুলিশ, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও গ্রাম পুলিশ, আনসার ভিডিপি, স্বেচ্ছাসেবকরা। সম্প্রীতির বন্ধনে থেকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি, বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামী, ছাত্র শিবির, হেফাজতে ইসলাম, ইসলামি আন্দোলন ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা ছাড়াও বিভিন্ন সাংবাদিক, সামাজিক, মানবিক সংগঠনসহ মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকজন সম্মিলিত ভাবে সনাতনী ধর্মাবলম্বীদের সার্বিক সহযোগিতা করে সম্প্রীতি বজায় রাখার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এতে পুলিশ, সেনাবাহিনী ও সকল রাজনৈতিক দলসহ মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকজনের ভূয়সী প্রশংসা করেন বাঁশখালী পূজা উদযাপন কমিটির নেতৃবৃন্দ ও সনাতনী ধর্মাবলম্বী নারী-পুরুষসহ সকল শ্রেণি পেশার মানুষ।
বাঁশখালীতে ৮৮ টি মণ্ডপে দূর্গাপূজা ও ১৬০ টি ঘট পূজা অনুষ্ঠিত হয়। বাঁশখালী থানা কেন্দ্রীয় কালীবাড়ী পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি ডাঃ শান্তনু দাশ, সেক্রেটারি লিটন দাশ,কালীপুর ইউনিয়ন পূজা কমিটির সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার রনি সরকার, পৌরসভা সভাপতি নির্মল রুদ্র, অধির চক্রবর্তী, পুকুরিয়া সভাপতি সুবল দে, সাধনপুর ইউপির সাধারণ সম্পাদক সুজন দাশ, চাম্বল ইউনিয়ন সভাপতি নিউটন দাশ, বৈলছড়ী ইউনিয়ন সভাপতি শেখর চৌধুরী দে, জনি শীল দে, কালীপুর ইউনিয়ন সভাপতি প্রকৌশলী রনি সরকার, পুঁইছড়ী ইউনিয়ন সভাপতি রাম প্রসাদ দেব, শেখেরখীল ইউনিয়ন সভাপতি প্রণব দেব, শীলকূপ ইউনিয়ন সভাপতি শিপন দাশসহ বিভিন্ন পূজা মণ্ডপের কমিটির নেতৃবৃন্দের সাথে কথা বলে জানান যায়, সেনাবাহিনী, পুলিশ প্রশাসনের কঠোর নিরাপত্তা, আনসার ভিডিপি, চৌকিদার, স্বেচ্ছাসেবক, ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী এবং পাশ্ববর্তী মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকজনের সার্বিক সহযোগিতার মধ্যদিয়ে শান্তিপূর্ণ ভাবে তারা দুর্গাপূজা উৎসব পালন ও প্রতিমা বিসর্জ্জন সম্পন্ন করেছে।
কাথরিয়া ইউনিয়ন আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা আলহাজ্ব শাহাজাহান চৌধুরী বলেন, বিগত বছরের তুলনায় এবছর আরো জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে নানা আয়োজনের মধ্যদিয়ে সনাতনী ধর্মাবলম্বীদের দুর্গোৎসব সম্পন্ন হয়েছে, বাঁশখালী থানা পুলিশ, সেনাবাহিনী, উপজেলা প্রশাসন, গ্রাম পুলিশ, আনসার ভিডিপি, আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সদস্য, স্বেচ্ছাসেবক সদস্যরা দায়িত্ববোধ থেকে নিরলস ভাবে দায়িত্ব পালন করছে, তাছাড়াও সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ থেকে মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকজন সার্বিক সহযোগিতা করেছে। সম্প্রীতির এই বন্ধন থেকে অটুট থাকে সেই প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন শাহাজাহান চৌধুরী।
বাঁশখালী উপজেলা পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি প্রণব কুমার দাশ বলেন, এবছর আরো জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে দুর্গোৎসব পালন করতে পেরেছি, বাঁশখালীর পুকুরিয়া থেকে পুঁইছড়ি পর্যন্ত পশ্চিম এলাকা থেকে পূর্বাঞ্চল পর্যন্ত সব পূজা মণ্ডপে গিয়েছি, কোনো ধরনের বাঁধা বিপত্তি ছাড়াই সবাই একদম শান্তিপূর্ণ ভাবে দুর্গোৎসব ও প্রতিমা বিসর্জ্জন সম্পন্ন করেছে, থানা পুলিশ, সেনাবাহিনী ও উপজেলার প্রশাসন এবং বিএনপি, জামায়াত ইসলামীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী এবং আশপাশের মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকজনের যে পরিমাণ সহযোগিতা ও সহানুভূতি পেয়েছি তাতে আমরা বাঁশখালী উপজেলা পূজা কমিটির পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের মাধ্যমে প্রশাসনসহ সকল রাজনৈতিক দল ও সকল ধর্মের মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন পৃুজা কমিটির সভাপতি প্রণব কুমার।
বাঁশখালী থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সাইফুল ইসলাম বলেন, বাঁশখালীতে এবছর ৮৮ টি পূজা মণ্ডপের মধ্যে ৮৭ টি মণ্ডপে দূর্গা পূজা ও ১৬০ টি ঘট পূজা সনাতনী ধর্মাবলম্বীরা অনেক উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্যদিয়ে দুর্গোৎসব সম্পন্ন করেছে, ৮৮টি দুর্গা পূজা মণ্ডপের মধ্যে ১ টিতে পূজা হচ্ছেনা, ১টিতে প্রতিমা বিসর্জ্জন দিবেনা, বাকিসব পূজা মণ্ডপের প্রতিমা বিসর্জ্জন সম্পন্ন করা হয়েছে। দুর্গোৎসব অনুষ্ঠান শুরু থেকেই নিয়মিত ভাবে মণ্ডপ গুলো যথারীতিতে পর্যবেক্ষণ ও পরিদর্শন করা হয়েছে, কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই একেবারে শান্তিপূর্ণ ভাবে দুর্গোৎসব অনুষ্ঠান সম্পন্ন করতে পেরেছি। প্রশাসন সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে দায়িত্ব পালন করেছে, পূজা মণ্ডপ গুলোতে সুন্দর ভাবে প্রতিমা বিসর্জ্জন ও অনুষ্ঠান সম্পন্ন করা হয়েছে। পূজা উদযাপনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বাঁশখালীর কোথাও কোনো মণ্ডপে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি দেখা যায়নি। এমনকি পূজা কমিটির পক্ষ থেকেও কোনো ধরনের অভিযোগ আসেনাই।
Leave a Reply